Search Bar

LightBlog

Breaking

LightBlog

Sunday, November 25, 2018

বাংলার নবজাগরণের প্রকৃতি....


ভূমিকা:- ঊনিশ শতকে বাংলা তথা ভারতের বিস্তীর্ণ অংশে বিদেশী ইংরেজদের সাম্রাজ্যবাদী শাসন সু-প্রতিষ্ঠিত হয়। এই সময় পাশ্চাত্য শিক্ষার সংস্পর্শে এসে মধ্যবিত্ত বাংলা সমাজে এক যুক্তিবাদী ও মানবতাবাদী আলোরন-এর সূচনা হয়। তৎকালীন ধর্ম,সমাজ, শিক্ষা,সাহিত্য,দর্শন রাজনীতি প্রভৃতি জীবনের সর্বক্ষেত্রে এর প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। ইতালির নবজাগরণ এর সঙ্গে তুলনা করে অনেকেই একে বঙ্গীয় নবজাগরণ বলে অভিহিত করেছেন।

নবজাগরণের প্রকৃতি:- উনিশ শতকের এই জাগরণ তার প্রকৃতি, তার স্বরূপ, গুরুত্ব এই সমস্ত কিছু বিচার-বিশ্লেষণ করে একে ইটালির রেনেসাঁ বা নবজাগরণ এর সঙ্গে আদৌ তুলনা করা যায় কি না তা নিয়ে পণ্ডিতদের মধ্যে যথেষ্ট বিতর্ক রয়েছে।

নবজাগরণ এর স্বপক্ষে যুক্তি:- ঐতিহাসিক যদুনাথ সরকার, সুশোভন সরকার প্রমূখ ঐতিহাসিকগণ বাংলা এই বৌদ্ধিক আন্দোলনকে নবজাগরণ বলে স্বীকার করে নিয়েছেন। ঐতিহাসিক যদুনাথ সরকার বলেছেন কনস্টান্টিনোপলের পতনের পর "ইউরোপের ইতালিতে যে রেনেসাঁ দেখা যায়, উনিশ শতকের বাংলার নবজাগরণ ছিল তদাপেক্ষা ব্যাপক গভীর এবং অধিকতর ও বৈপ্লবিক। এই নবজগরণ ছিল প্রকৃতপক্ষে একটি রেনেসাঁ।" অন্যদিকে ঐতিহাসিক সুশোভন সরকার মনে করেন যে পঞ্চদশ শতকে ইউরোপের নবজাগরণ ইটালি ভূমিকা নিয়েছিল উনিশ শতকের নবজাগরণের বাংলা সেইরূপ ভূমিকা নিয়েছিল। যুক্তি হিসেবে তারা দেখান যে ইউরোপীয় নবজাগরণ যেমন ইউরোপের অন্ধকার,কুসংস্কারচ্ছন্নতা থেকে মুক্ত করেছিল ঠিক তেমনি বাংলা নবজাগরণ ভারতবর্ষে অন্ধকার,জড়তা ও কুসংস্কার থেকে মুক্ত করে। পাশাপাশি তারা যুক্তি হিসেবে দেখান যে ইউরোপীয় নবজাগরণের প্রেরণার উৎস ছিল গ্রীক এবং ল্যাটিন ভাষা ঠিক সেরকমই বাংলার নবজাগরণের প্রেরণার উৎস ছিল প্রাচীন সংস্কৃত, মধ্যযুগীয় ফার্সি ও ইংরেজি সাহিত্য।

নবজাগরণ এর বিপক্ষে যুক্তি:- অপরপক্ষে নবজাগরণের বাস্তবতা নিয়ে  প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে। অশোক মিত্র, ড: বিনয় ঘোষ, সুমিত সরকার প্রমূখ ঐতিহাসিকগণ বলেছেন যে এটি একটি ঐতিহাসিক প্রতারণা।
ঐতিহাসিক অরবিন্দ পোদ্দার এই নবজাগরণ কে বলেছেন এক অসত্য নিরস ঘটনা। যুক্তি হিসেবে তারা দেখিয়েছেন যে:-
1. বাংলার নবজাগরণের ব্যাক্তি ছিল খুবই সীমিত এবং তা ছিল মূলত শহরকেন্দ্রিক। বিশেষ করে কোলকাতা কেন্দ্রিক। গ্রাম বাংলার বৃহত্তর জনগোষ্ঠী এই নবজাগরণের কোন সুফল পায়নি।
2. বাংলার নবজগরণ ছিল মূলত বর্ণহিন্দুদের অর্থাৎ অভিজাত গোষ্ঠীর। সাধারণ মানুষ এবং মুসলিম সমাজ এর বাইরে ছিল।
3. এই নবজাগরণ অনেকটা ইংরেজদের হাতে তৈরি করা নবজাগরণ। নবজাগরণের হোতারা মনে করতেন কেবলমাত্র ইংরেজ শাসনের দ্বারা ভারতবর্ষের মঙ্গল সাধন হবে।
4. বাংলার নবজাগরণের প্রবক্তারা বাংলার ধর্মীয় কাঠামো, সমাজ সংগঠন এবং জাতিভেদ প্রথার বিরুদ্ধে পুরোপুরি সাফল্য লাভ করতে পারেননি।
5. এই নবজাগরণ মূলত মধ্যবিত্ত শ্রেণী এবং অভিজাতদের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল।
তাই পন্ডিত জওহরলাল নেহেরু এবং ঋষি অরবিন্দ ঘোষ মনে করেন যে ভারতের মাটিতে ইউরোপীয় ধাঁচের নবজাগরণ কখনোই সম্ভব নয়।
গুরুত্ব তথা মূল্যায়ন:- নানান ত্রুটি ও সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও বাংলার এই নবজাগরণের গুরুত্বকে কখনো কিন্তু অস্বীকার করা যায় না। পরাধীন দেশের নবজাগরণে না নান রুটি দ্বিধা হয়তো থাকতে পারে- এতে কোনো অস্বাভাবিকতা নেই। তা সত্ত্বেও এটা কিন্তু অবশ্যই মানতে হবে যে পরাধীন ভারতবর্ষে এই নবজাগরণ ই প্রথম একটা বৌদ্ধিক আন্দোলন গড়ে তুলেছিল ভারতের মাটিতে। এরফলেই জন্ম নেয় ভারতের জাতীয়তাবাদ,ভারতের সার্বিক সংস্কার। জনৈক জার্মান সমাজতত্ত্ববিদ এর মতে বাংলার নবজাগরণ এর দ্বারা ভারত বর্ষ মধ্যযুগ থেকে আধুনিক যুগে উন্নীত হয়েছিল।

5 comments:

Adbox